ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সীমান্ত বিতর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে এক ভারতীয় নাগরিকের পাসপোর্টকে কেন্দ্র করে। অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করে চীন যে নীতিগত অবস্থানে অনড়, তার প্রভাব এবার দেখা গেল সাংহাই বিমানবন্দরে এক ভারতীয়ের ভিসা ও পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতায়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও একবার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং তাদের চিরাচরিত অবস্থান বজায় রেখে ঘোষণা করেন, "জাংনান (অরুণাচল প্রদেশ) চীনের অংশ। ভারতের ‘অবৈধভাবে’ গঠিত অরুণাচল প্রদেশকে চীন কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি।" এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এলো, যখন গত ২১ নভেম্বর অরুণাচলের বাসিন্দা পেমা ওয়াং থংডককে সাংহাই বিমানবন্দরে ১৮ ঘণ্টা আটকে রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, তার পাসপোর্টে জন্মস্থান অরুণাচল প্রদেশ উল্লেখ থাকায় চীনা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এটিকে 'অবৈধ' বলে চিহ্নিত করেছিল।
ঘটনার প্রতিবাদে ভারত দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করে। নয়াদিল্লি চীনের দাবিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অখণ্ড ও অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সেখানকার বাসিন্দারা ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহারের সম্পূর্ণ আইনি অধিকার রাখেন। ভারত এই ঘটনাকে চীনা কর্তৃপক্ষের হয়রানি হিসেবে দেখছে। যদিও চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কেবল 'আইন অনুযায়ী নিয়মিত তল্লাশি' করা হয়েছে এবং কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়নি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক কঠোর বার্তায় জানান, "অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অখণ্ড অংশ, এই বাস্তবতা বদলাবে না।" বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এই ধরনের পদক্ষেপ, যেমন পূর্বে অরুণাচলের ক্রীড়াবিদদের 'স্ট্যাপলড ভিসা' দেওয়া, মূলত তাদের রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার একটি কৌশল। এই ধরনের ভিসা প্রদানের মাধ্যমে চীন বোঝাতে চায় যে অরুণাচল, কাশ্মীর বা অন্য বিতর্কিত অঞ্চলের বাসিন্দারা ভারতে নয়, বরং আলাদা একটি অঞ্চলের নাগরিক। কিন্তু এই ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে এক নতুন মাত্রার বিতর্ক সৃষ্টি করল।
