জাতীয়

কড়াইল বস্তিতে ১৫০০ ঘর ভস্মীভূত: খোলা আকাশের নিচে ৫০ হাজার মানুষ..

কড়াইল বস্তিতে ১৫০০ ঘর ভস্মীভূত: খোলা আকাশের নিচে ৫০ হাজার মানুষ..

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) গভীর রাতে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে লাগা এক ভয়াবহ আগুন প্রায় ১৫০০ বসতঘরকে মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২০টি ইউনিট দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে বুধবার ভোরে আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বস্তির প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দার জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, যেখানে এক সময় হাজার হাজার মানুষের বসতি ছিল, সেখানে এখন কেবল পোড়া টিন, কাঠ ও ছাইয়ের স্তূপ। আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, অনেক বস্তিবাসীর পক্ষে কোনো ধরনের মালামাল বা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বের করা সম্ভব হয়নি। বনানীর একটি বিপণিবিতানের কর্মী আবুল খায়ের, যিনি সাত বছর ধরে এই বস্তিতে ভাড়া থাকতেন, তিনি যেন এখনো ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

আবুল খায়ের বলেন, "যখন আগুন লাগে, তখন আমি বনানীতে কাজে ছিলাম। স্ত্রী কাজ থেকে ফিরে এসে ফোন করে জানায় আগুন লেগেছে। ছুটে এসে দেখি, আমাদের ঘরসহ সব জ্বলছে। আমাদের সাজানো সংসার এক মুহূর্তে ছাই হয়ে গেল, কিছু বের করতে পারিনি।" তার স্ত্রী নাসরিনও গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তারা এখন জানেন না, নতুন করে কোথায় এবং কীভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজবেন।

বস্তির আরেক বাসিন্দা, ভ্যানচালক মনোয়ার হোসেন জানান, তিনি তার পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে সারারাত খোলা আকাশের নিচে ছিলেন। শীতে জবুথবু হয়ে থাকা তার শিশুসন্তানদের সর্দি লেগে গেছে। তিনি এখন ওষুধ কেনার সামর্থ্যও রাখেন না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "আমার ঘর পুড়ে ছাই, এখন নতুন করে ঘর কীভাবে বানাবো?"

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের চরম বেগ পেতে হয়েছে, মূলত বস্তির সরু রাস্তা এবং পানির স্বল্পতার কারণে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে এবং খুব দ্রুতই খাদ্য ও প্রাথমিক সাহায্য বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে এই বিশাল সংখ্যক মানুষের পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জটি বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।