আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এক কঠিন সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নির্বাচনী ময়দানে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন একই সঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধানে ব্যস্ত: প্রথমত, দলের অভ্যন্তরে মনোনয়ন-কেন্দ্রিক সম্ভাব্য ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রশমিত করা এবং দ্বিতীয়ত, তাদের ৩১ দফার রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা ও নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো সরাসরি ভোটারদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার আগেই মনোনয়ন-সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো নিরসন করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই লক্ষ্য পূরণে যেসব নেতা নির্বাচনের টিকিট পাননি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা চলছে। এই সাংগঠনিক কাজ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি দলের প্রচারণায় এবার নতুনত্ব আনা হয়েছে। তারা সাতটি গুরুত্বপূর্ণ খাত—যার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারী ক্ষমতায়ন—কেন্দ্র করে সাতটি প্রধান প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছে।
বিএনপির লিফলেটে এবার যে প্রতিশ্রুতিগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ৫০ লাখ ফ্যামিলি কার্ড চালু, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি দমনে বিশেষ ব্যবস্থা এবং ৫ বছরে ৫ কোটি গাছ রোপণের পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ। জলবায়ু ইস্যুতে ২০ হাজার কিলোমিটার নদী ও খাল পুনরুদ্ধার, আধুনিক তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ এবং কমিউনিটি সেচ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথাও প্রচারণায় তুলে ধরা হচ্ছে। এমনকি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য মাসিক ভাতা প্রদান এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ নিরসনে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়ার মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে একটি সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং তৃণমূল স্তরে প্রচারণা জোরদার করা হবে। যেখানে অন্তর্দ্বন্দ্ব তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ, বিলবোর্ড এবং ব্যানার টাঙানোর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে অনেকটা এগিয়ে গেছেন। এই প্রস্তুতিতে স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মতো আঞ্চলিক বিষয়গুলিও গুরুত্ব পাচ্ছে।
