রাজনীতি

ঝিনাইদহের ফুরসন্দি গ্রামে বিএনপির দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, ১০ জন আহত।

ঝিনাইদহের ফুরসন্দি গ্রামে বিএনপির দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, ১০ জন আহত।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়ন ফের রাজনৈতিক কোন্দলের শিকার হয়েছে। ইউনিয়নের দুই প্রভাবশালী বিএনপি নেতা শাহাবুর মোল্লা ও জাহিদ বিশ্বাসের সমর্থকদের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনার ফলস্বরূপ সৃষ্ট এই ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজনকে গুরুতর অবস্থায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সংঘর্ষের সূত্রপাত একটি আপাতদৃষ্টিতে সামাজিক কলহ থেকে হলেও, এর নেপথ্যে কাজ করেছে স্থানীয় রাজনৈতিক গ্রুপিং। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, শাহাবুর মোল্লার সমর্থক আল-আমিন এবং ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জাহিদ বিশ্বাসের সমর্থক ফিরোজের মধ্যেকার পারিবারিক বিরোধ মুহূর্তেই দলীয় সংঘাতে রূপ নেয়। উভয়পক্ষের কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুটি বাড়িতে ভাঙচুরও চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

এই ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপিতে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মী অভিযোগ করেছেন, দলের প্রভাবশালী নেতা শাহাবুর মোল্লা তার গ্রুপকে শক্তিশালী করতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কিছু কর্মীকে নিজের বলয়ে টেনে এনেছেন। তাদের দাবি, ৫ আগস্টের আগের আওয়ামী লীগ কর্মীরাই এখন শাহাবুর মোল্লার ছত্রছায়ায় গ্রামে গ্রামে বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ ঘটিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ কর্মীদের এই অনুপ্রবেশের কারণেই দলের মধ্যে সংঘাতের প্রবণতা বাড়ছে।

এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন ফুরসন্দি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জাহিদ বিশ্বাস। তার মতে, "বিএনপিতে আসাটা দোষের নয়, কিন্তু এসে মারামারি করা উচিত না। আওয়ামী লীগের যেসব লোক ৫ আগস্টের পর বিএনপিতে এসেছে, তারাই মূলত এসব ঝামেলা করছে।" এদিকে, শাহাবুর মোল্লার বক্তব্য পাওয়া না গেলেও তার সমর্থক ওহাব মোল্লা নিজেকে এলাকার সবচেয়ে বড় বিএনপি কর্মী দাবি করে জানান যে, দলীয় পদ না থাকলেও শাহাবুর মোল্লার প্রভাব এখানে অনস্বীকার্য।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এবং ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এটি সামাজিক বিরোধের সূত্র ধরে রাজনৈতিক দুটি পক্ষের সংঘর্ষ।” এই সংঘর্ষ স্থানীয় বিএনপিতে অন্তর্দ্বন্দ্বের পাশাপাশি দলীয় আদর্শিক অবস্থানের ক্ষেত্রে একটি গুরুতর প্রশ্ন সৃষ্টি করলো।