রাজনীতি

৯টি পুরনো মেডিকেলে ছাত্র সংসদের ঐতিহ্য শেষ: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ‘কাল’ পার হয়েও প্রশাসন নীরব

৯টি পুরনো মেডিকেলে ছাত্র সংসদের ঐতিহ্য শেষ: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ‘কাল’ পার হয়েও প্রশাসন নীরব

দেশের শিক্ষাঙ্গনে আবারও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরদার হলেও এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে। একসময়ে দেশের ৯টি পুরনো মেডিকেল কলেজে যে ছাত্র সংসদের প্রাণবন্ত ঐতিহ্য ছিল, তা বর্তমানে বিলীন। মেডিকেল প্রশাসন এই বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন এবং এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তাদের আলোচনার টেবিলে জায়গা করে নিতে পারেনি। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও তাদের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্মটি ফিরিয়ে আনার দাবিতে কোনো উচ্চকণ্ঠ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের পরও মেডিকেল কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতা ছিল। সর্বশেষ ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ডিএমসি, এসএসএমসি এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সাম্প্রতিককালে নির্বাচন হলেও তা এক প্রকার ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কাল’ পার করেছে, যেখানে সরকারি ছাত্র সংগঠন একক আধিপত্য বজায় রেখেছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই ধারার ফলস্বরূপ ক্যাম্পাসে ক্ষমতা ও আধিপত্যের রাজনীতি চরম আকার ধারণ করে। সেই সময়ের নির্মম নিপীড়নের শিকার হয়ে শিক্ষার্থীরা এখন রাজনীতি বন্ধের দাবিতে সরব। এটিই ছাত্র সংসদ পুনর্বহালের দাবির ক্ষেত্রে তাদের নীরবতার অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন নিজেদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার না হয়ে ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখার দিকেই বেশি ঝুঁকছেন।

ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্রশিবির এই অচলাবস্থা ভাঙার চেষ্টা করছে। তাদের 'মেডিকেল জোন' সভাপতি ডা. যায়েদ আহমাদের দাবি, ছাত্র সংসদ ফি নেওয়া সত্ত্বেও সংসদ বন্ধ থাকা অযৌক্তিক। এই প্রেক্ষাপটে তারা নিজ উদ্যোগে একটি খসড়া গঠনতন্ত্র প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছেন, যা শিগগিরই প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে। শিবিরের এই উদ্যোগ তখনই এলো, যখন ছাত্রদল সহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব।

অন্যদিকে, মেডিকেল কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা এই বিষয়ে সরাসরি উদাসীনতা দেখিয়েছেন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাজহারুল শাহীন বলেন, 'আমাদের এই মুহূর্তে ছাত্র সংসদের কোনো পরিকল্পনা নাই।' তিনি যোগ করেন, এই সিদ্ধান্তগুলো কলেজগুলোর 'একাডেমিক কাউন্সিল' গ্রহণ করে এবং বিগত কাউন্সিলগুলোতে কেউ এই এজেন্ডা প্রস্তাবই করেনি। একইভাবে ঢামেক ও রামকে’র অধ্যক্ষরাও জানান, নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা বা প্রস্তাবনা তাদের কাছে আসেনি।

শিক্ষাবিদদের মতে, কর্তৃপক্ষের এই 'একাডেমিক কাউন্সিল' নির্ভরতা এবং কোনো পক্ষের কাছ থেকে প্রস্তাবনা না পাওয়ার অজুহাত—উভয়ই দীর্ঘদিনের ছাত্র অধিকার উপেক্ষার ফল। এর ফলে ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে যে ঐতিহ্য ছিল, তা বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।