রাজনীতি

ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, ‘আমার কণ্ঠ দমন করা হয়েছে’!

ড. ইউনূস রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, ‘আমার কণ্ঠ দমন করা হয়েছে’!

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করার তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যকালে তিনি চরম অপমানিত বোধ করছেন এবং তার সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই রাষ্ট্রপতির প্রথম গণমাধ্যমের সামনে আসা সাক্ষাৎকার, যা দেশের বর্তমান সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটে এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তার হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত প্রায় সাত মাস ধরে তার সঙ্গে কোনো প্রকার সাক্ষাৎ করেননি। এটি দেশের আনুষ্ঠানিক কাঠামোতে প্রধান দুই সাংবিধানিক প্রধানের মধ্যেকার নজিরবিহীন দূরত্বের প্রতিফলন। এর পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতির প্রেস বিভাগকে সরিয়ে দেওয়া এবং আরও গুরুতরভাবে সেপ্টেম্বরে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের সকল দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলার ঘটনা তার অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছবি অপসারণের ঘটনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “এক রাতের মধ্যে সব দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলা হলো। জনগণের কাছে একটি ভুল বার্তা যায় যে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি।” এই বিষয়ে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে লিখিতভাবে অবহিত করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিজের অসহায়ত্ব ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “আমার কণ্ঠ দমন করা হয়েছে।” এই মন্তব্য দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদাধিকারীর ক্ষমতাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন যদিও সাংবিধানিকভাবে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, কিন্তু বাস্তবে কার্যনির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত থাকে। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে সংসদ ভেঙে যায়। সেই পরিস্থিতিতে, রাষ্ট্রপতিই দেশের একমাত্র সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, যার ফলে তার অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

উল্লেখ্য, ৭৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ২০২৩ সালে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তবে, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, রাষ্ট্রপতির এই বিস্ফোরক মন্তব্য দেশের ভবিষ্যতের সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

পদত্যাগের আগ্রহ প্রকাশ করলেও রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন জানান, “নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমার কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির পদের কারণে আমি আমার অবস্থান ধরে রাখছি।” অর্থাৎ, সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি না করার জন্যই তিনি আপাতত পদে বহাল আছেন।

রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি নিয়মিত সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন নিশ্চিত করেন যে, জেনারেল জামান তাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ক্ষমতা দখলের তার কোনো ইচ্ছা নেই। এই বিষয়টি দেশের গণতন্ত্র এবং সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে চলমান জল্পনা-কল্পনার মধ্যে স্থিতিশীলতার বার্তা দিয়েছে।