হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর শাসনকাল কেবল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নয়, বরং যুগান্তকারী অর্থনৈতিক ও বিচারিক সংস্কারের জন্যও স্মরণীয়। তাঁর প্রবর্তিত বিচারব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নাগরিক জীবনের সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছিল।
সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক মডেল: ওমর (রা.)-এর শাসনামলে ভূমি রাজস্ব ছিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জোগান দেওয়ার প্রধান মাধ্যম। ভূমির ধরন ও উৎপাদনের পরিমাণ বিবেচনা করে এই রাজস্ব নির্ধারিত হতো। পাশাপাশি, ব্যবসা-বাণিজ্যের পণ্যের ওপর শুল্ক এবং বিজিত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত সম্পদও রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে সমৃদ্ধ করত। তবে তাঁর অর্থনৈতিক নীতির মূল লক্ষ্য ছিল নাগরিক জীবনের দারিদ্র্য বিমোচন। তিনি সম্মানিত ও অসহায় নাগরিকদের জন্য বিশেষ ভাতার প্রচলন করেছিলেন, যা একটি আধুনিক সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রাথমিক ধারণা দেয়।
উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তার: তাঁর সময়ে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ভূমিব্যবস্থার সংস্কার, খাল ও জলাধার খনন করে সেচব্যবস্থার আধুনিকায়ন, রাস্তা নির্মাণ, গৃহনির্মাণ এবং নতুন নতুন নগর ও শহরের সৃষ্টি ছিল উল্লেখযোগ্য। এই উন্নয়নমূলক কাজগুলো একটি শক্তিশালী ও জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠনের পথ সুগম করে।
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা: ওমর (রা.) সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি উচ্চবংশীয় পরিচয়ের চেয়ে জ্ঞান, শিক্ষা ও ধীশক্তির অধিকারীদের বিচারক পদে নিয়োগ দিতেন এবং বিচারকদের জন্য উচ্চতর বেতন নির্ধারণ করতেন যাতে তারা আর্থিকভাবে স্বাধীন থাকতে পারেন। বিচারকার্যে সহায়তা ও আইনের ব্যাখ্যা প্রণয়নের জন্য কোরআন-হাদিসে পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে তিনি 'ফতোয়া বিভাগ' চালু করেন।
তিনি তাঁর শাসনামলে 'আইনের চোখে সবাই সমান' নীতিটি কঠোরভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। এর এক উজ্জ্বল উদাহরণ হলো, কাজি জায়েদ (রা.)-এর আদালতে নিজে বিবাদী হয়ে উপস্থিত হওয়ার ঘটনা। খলিফাকে দেখে কাজি যখন উঠে দাঁড়ান, তখন ওমর (রা.) তাঁকে বলেন, "জায়েদ, এটাই তোমার প্রথম অবিচার। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার সামনে ওমর আর একজন সাধারণ নাগরিক সমান না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি কাজির যোগ্য বিবেচিত হতে পারো না।" এই ঘটনাটি তাঁর বিচারিক নিরপেক্ষতার চরম নিদর্শন।
