রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে উগ্রবাদী শক্তির উত্থানের আশঙ্কা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। যদিও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সূত্রগুলো দাবি করে আসছে যে, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (TTP) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (ARSA)-এর কার্যকলাপ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে দমন করা হয়েছে, কিন্তু মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘ই হয়দার’ নামের একটি প্রোফাইল থেকে টিটিপি'র অস্ত্রধারী হিসেবে দাবি করা উগ্রবাদীরা একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছে। ওই ভিডিওতে তারা অভিযোগ করে, বাংলাদেশের ধর্ম প্রচারকরা জিহাদের প্রতি যুবকদের উদ্বুদ্ধ করছেন না এবং উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর দাওয়াতি কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থা দূর না হলে তারা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিয়েছে। এই হুমকি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উগ্রবাদী শক্তির উত্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে বাধা এবং স্বাধীন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের মাদক সংশ্লিষ্টতা, অস্ত্রের মজুদ বৃদ্ধি এবং সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হচ্ছে। আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে রোহিঙ্গা উগ্রবাদীদের যোগসূত্রের বিষয়টি দাতাসংস্থাগুলোকেও চিন্তায় ফেলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বৈদেশিক দাতা সংস্থার মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন, কেবল ত্রাণ সহায়তা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, বরং রোহিঙ্গা যুবকদের বিপথগামীতা না থামালে এটি কেবল বাংলাদেশ নয়, পুরো উপমহাদেশের জন্য বিশৃঙ্খলার উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে। তারা রোহিঙ্গা সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের ওপর দ্রুত জোর দিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সূত্রগুলো দেশে উগ্রবাদের অস্তিত্ব না থাকার দাবি করলেও, এই বিবৃতির ভিত্তি সাধারণ জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। বরং কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট জালিয়াতি করে রোহিঙ্গা সদস্যরা গ্রেফতার হওয়ায় বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান ও বৈশ্বিক কর্মসংস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
