আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমমনা ইসলামি দলগুলো এক অনন্য সমঝোতার পথে হাঁটছে। যদিও শরিক দলগুলো প্রায় ২২০টি আসন দাবি করেছে, তবে জোটের প্রধান অংশীদার জামায়াতে ইসলামী মনে করে, এখানে সংখ্যার চেয়ে গুণগত যোগ্যতাই বড়। 'যাকে যেখানে দিলে বিজয়ী হতে পারবেন তাকে সেখানে প্রার্থী করা হবে'—এই ফর্মুলাতেই এগোচ্ছে ৮ দলীয় এই জোট। এর মাধ্যমে তারা দেশের ৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগ পরবর্তী রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণে শক্তিশালী অবস্থান নিতে চায়।
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। হাতে সময় কম থাকায় লিয়াজোঁ কমিটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের এবং ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমানের মতো শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারা সবাই 'এক দলের' মতো কাজ করছেন। ব্যক্তিগত বা দলীয় দাবির চেয়ে জোটের সামগ্রিক বিজয়ই তাদের কাছে এখন মুখ্য। উদাহরণস্বরূপ, হবিগঞ্জ-৪ আসনে খেলাফত মজলিস ও জামায়াত উভয়েরই শক্ত প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও আলোচনার মাধ্যমে একক প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
মাঠ জরিপের ভিত্তিতে প্রতিটি দল তাদের সম্ভাব্য বিজয়ীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। জামায়াতের নীতি নির্ধারকরা বলছেন, বৃহত্তর ইসলামি ঐক্যের স্বার্থে তারা সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে গত ১৬ মাসে এই দলগুলো একে অপরের অনেক কাছাকাছি এসেছে। এই দীর্ঘ সময়ের সংহতিকে তারা এখন ভোটের বাক্সে রূপান্তর করতে চায়। বিশেষ করে তরুণ ভোটার এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোট যেন বিচ্ছিন্ন না হয়, সেদিকেই তাদের তীক্ষ্ণ নজর।
এই জোটের মাধ্যমে তারা কেবল নির্বাচন নয়, বরং সরকার গঠনে বড় ভূমিকা রাখার স্বপ্ন দেখছে। জোটের নেতারা মনে করেন, অতীতে ইসলামি দলগুলোর অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে অন্য শক্তিগুলো ফায়দা লুটেছে, যা এবার আর হতে দেওয়া হবে না। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পেলে পরিষ্কার হবে কোন দল কতটি আসনে ছাড় পেয়েছে এবং জামায়াতের কৌশলগত অবস্থান কী হচ্ছে। দেশজুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন—এই ঐক্যবদ্ধ শক্তি কি নির্বাচনী সমীকরণে বড় কোনো ওলটপালট ঘটাতে পারবে?
