Home / ব্যয় কমাতে শিশুদের নাশতা বন্ধ

বিশেষ সংবাদ

ব্যয় কমাতে শিশুদের নাশতা বন্ধ

ব্যয় কমাতে শিশুদের নাশতা বন্ধ

ব্যয় কমানোর অজুহাতে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন’ প্রকল্প থেকে শিশুদের নাশতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে এসব ক্লাবে শিশুদের আসা কমে গেছে। গান, আবৃত্তি, কারাতেসহ নানা সৃজনশীল বিষয় শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে দেশের সব জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছিল।

একই অবস্থা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ‘উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্প’ এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়)’।

এই দুটি প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক গত জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে। এই দুটি সংস্থা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন।

সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির আওতায় কিছু প্রকল্পে ব্যয় কমানো হয়েছে। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের নাশতা ‘আপ্যায়ন ভাতা’র অংশ ভেবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ফরিদা পারভীন, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

 

তিনটি প্রকল্পই সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত হয়। নাশতা, প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠক বন্ধ থাকলেও প্রকল্পের অন্যান্য কাজ, জনবলের ভাতা-সুবিধাদি চালু রয়েছে। এসব প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে ব্যয় সাশ্রয়কে অর্থহীন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশেষ করে শিশুদের নাশতা বন্ধ করে দেওয়াকে অবিবেচক সিদ্ধান্ত বলছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির আওতায় কিছু প্রকল্পে ব্যয় কমানো হয়েছে। কিশোর-কিশোরী ক্লাবের নাশতা ‘আপ্যায়ন ভাতা’র অংশ ভেবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে অধিদপ্তর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, এটি আপ্যায়ন ভাতা নয়, শিশুদের পুষ্টির বিষয়। এটি চালু রাখতে হবে।

আইজিএ প্রকল্পের প্রশিক্ষণ বিষয়ে ফরিদা পারভীন বলেন, প্রশিক্ষণ বন্ধ নেই। প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা অর্ধেক করা হয়েছে। তবে ভাতা একই আছে।

তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উপজেলা পর্যায়ে নারীদের প্রশিক্ষণ ‘পরবর্তী নির্দেশ’ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণার্থী অর্ধেক করা হয়েছে। আগে জেলা পর্যায়ে একটি বিষয়ে প্রতি ব্যাচে ৪৫ জন করে নেওয়া হতো।

‘নাশতার জন্য তো ক্লাবে আসি না।’ বন্ধুদের অনেকে ক্লাবে আসছে না কেন জানতে চাইলে সে বলে, ‘বন্ধুদের অনেকে এখন আসতে চায় না। জিজ্ঞেস করলে বলে, নাশতা দেয় না, আর ভালো লাগে না।’

তুষার সরদার (১৭), সাতক্ষীরা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে

ক্লাবে নাশতা বাদ

তুষার সরদার (১৭) সাতক্ষীরা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। একই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে তার ভাই। এক বছর ধরে দুই ভাই সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রসুলপুরের কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য। তুষার নাশতা প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলে, ‘নাশতার জন্য তো ক্লাবে আসি না।’ বন্ধুদের অনেকে ক্লাবে আসছে না কেন জানতে চাইলে সে বলে, ‘বন্ধুদের অনেকে এখন আসতে চায় না। জিজ্ঞেস করলে বলে, নাশতা দেয় না, আর ভালো লাগে না।’

তুষারের মা সেলিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেদের গান, আবৃত্তিতে খুব আগ্রহ। সে জন্য ক্লাবে দিয়েছি। নাশতার বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাইনি।’

রসুলপুরের ওই কিশোর-কিশোরী ক্নাবে ৩০ জন সদস্য রয়েছে। গত শনিবার উপস্থিত ছিল মাত্র ৭ জন।

জেলার অন্য এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, শুক্র ও শনিবার বিকেলে শিশুদের আবৃত্তি, গান ও কারাতে প্রশিক্ষণ শেষে পুষ্টিকর নাশতা দেওয়া হতো। জুলাই থেকে খাবার কমিয়ে শুধু দুধ-পাউরুটি দেওয়া হচ্ছিল। এখন পুরোপুরি বাদ। ওই অভিভাবকের প্রশ্ন, ‘শিশুদের নাশতায় কয় টাকা খরচ হয়, যে বাদ দিতে হলো?

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ‘কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। ৫৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার প্রকল্পের আওতায় ৬৪ জেলায় ৫ হাজার ৮৮৩টি ক্লাব করা হয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য, সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রান্তিক কিশোর-কিশোরীদের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে সক্ষম করা। বাল্যবিবাহ রোধে সচেতন করা। প্রজননস্বাস্থ্য অধিকার সম্পর্কে জানানো এবং সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করা।

প্রতি ক্লাবে ৩০ সদস্য হিসাবে সারা দেশে কিশোর-কিশোরী ক্লাবে মোট সদস্য ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯০ জন। এতে জনপ্রতি ৩০ টাকা করে বরাদ্দ ধরলে দিনে ব্যয় হয় ৫২ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা। সপ্তাহে দুই দিন ক্লাবে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে শিশুরা অংশ নেয়।

 

নতুন অর্থবছরের শুরুতে জুলাই থেকে প্রকল্পে শিশুদের নাশতার বরাদ্দ অর্ধেক কমিয়ে ১৫ টাকা করা হয়। তবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ক্লাবগুলোতে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, নাশতার কোনো বরাদ্দ থাকছে না।

সাতক্ষীরার দেবহাটা ও সদর উপজেলায় কিশোর-কিশোরী ক্লাবের ফিল্ড সুপারভাইজার করবী সুলতানা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন, তাঁর ক্লাবে এখন কিশোর-কিশোরীদের নাশতা দেওয়া বন্ধ