৫৯টি জেলা পরিষদের নির্বাচনে ৪৯টিতেই চেয়ারম্যান পদে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীরা। এর মধ্যে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন ২৫ জন। আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছেন ৬ জন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) একজন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। আর কোনো দলের সমর্থন ছাড়া স্বতন্ত্র ৩ জন প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
গতকাল সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন নির্দলীয় হলেও আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন ঘোষণা করেছিল। এমনকি দল–সমর্থিত প্রার্থীদের নামও প্রকাশ করেছিল।
তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে ১৭ অক্টোবর (গতকাল) ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদের নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়।
ফেনী ও ভোলা জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানসহ সব পদেই একক প্রার্থী থাকায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। বাকি ৫৭টি জেলা পরিষদে গতকাল সকাল নয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ভোট হয় ৩৪টি জেলা পরিষদে। একক প্রার্থী থাকায় চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়নি ২৫ জেলায়।
জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। এবার নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা থাকলেও ভোটের দিন ছিল শান্তিপূর্ণ। বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভোটের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। ভোট নেওয়া হয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছিল সিসি ক্যামেরা। রাজধানীর নির্বাচন ভবন থেকে সিসিটিভিতে সরাসরি ভোট পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ভোট গ্রহণ শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোথাও অনিয়ম, সহিংসতা, গোলযোগ বা গন্ডগোলের তথ্য পাওয়া যায়নি। নির্বাচন নিয়ে কমিশন সন্তুষ্ট। গাইবান্ধা–৫ আসনের উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাব জেলা পরিষদের নির্বাচনে পড়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
আরও পড়ুন
সিইসি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোথাও গোপন বুথে ভোটার ছাড়া দ্বিতীয় ব্যক্তি দেখা যায়নি। সিসিটিভির মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন পরিচালনায় একটি নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ করে দেবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, গাইবান্ধা–৫ আসনের উপনির্বাচনে সিসিটিভির মাধ্যমে ইসি পর্যবেক্ষণ করে। সেখানে বেশ কিছু গুরুতর অনিয়ম দেখা যায়। কমিশন পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছিল। সেখান থেকে হয়তো একটি বার্তা এসেছে। এর একটি ইতিবাচক প্রভাব জেলা পরিষদ নির্বাচনে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের বিষয়টি নির্বাচনী সংস্কৃতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইসি এখনো এই বিশ্লেষণে যায়নি। আর এটি ইসির বিষয় নয়, ইসি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সংসদ সদস্যরা জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে গেছেন, তাঁদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। বড় পরিসরের নির্বাচনে সিসিটিভির ব্যবহার প্রশ্নে তিনি বলেন, ছোট পরিসরে এবার সিসিটিভি ব্যবহার করা হয়েছে। বড় পরিসরের নির্বাচনে বড় সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা ইসির থাকবে।
আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীদের একতরফা বিজয়ের মধ্যেও কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, রংপুর, শেরপুর ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীদের হারিয়ে জয় পেয়েছেন বিদ্রোহীরা। দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টি–সমর্থিত প্রার্থী। আর নরসিংদী, পঞ্চগড় ও পটুয়াখালী জেলা পরিষদে জয়ী প্রার্থীরা কোনো দলের সমর্থিত বা বিদ্রোহী ছিলেন না। এই ১০টি জেলা বাদে অন্য জেলা পরিষদগুলোতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীরা।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে সন্দ্বীপ কেন্দ্রে ইভিএমে কারিগরি ত্রুটির কারণে অন্তত ২০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। জানা গেছে, প্রথম ভোটার ভোট দিতে গেলে ইভিএমের ব্যালট অংশে লাইট দেখা যাচ্ছিল না। বিষয়টি জানানোর পর ওই যন্ত্রটি পরিবর্তন করা হয়। তবে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মেজবাউল করিম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ভোট গ্রহণে পাঁচ থেকে সাত মিনিট দেরি হয়েছে।