দখলদার ইসরাইলে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিরতার মাঝে এক নজিরবিহীন অভিবাসন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইলি সংসদ সদস্য গিলাদ কারিভ এই পরিস্থিতিকে 'ভয়াবহ সুনামি' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইসরাইলি পার্লামেন্ট (নেসেট)-এ পেশ করা এক বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের শুরু থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী স্থায়ীভাবে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এত অল্প সময়ে দেশের মানবসম্পদের এই বিশাল ক্ষতি ইসরাইলের ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি।
গত ২০ অক্টোবর ইসরাইলি পার্লামেন্টের ইমিগ্রেশন ও অ্যাবসরপশন কমিটিতে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে নিট অভিবাসন ভারসাম্য অর্থাৎ স্থায়ীভাবে দেশত্যাগকারীদের সংখ্যায় ১ লাখ ২৫ হাজার ২০০ জনের হ্রাস দেখা গেছে। ওই কমিটির চেয়ারম্যান গিলাদ কারিভ এই সংখ্যাবৃদ্ধির হারকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
কনেসেট রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারের প্রস্তুত করা ওই প্রতিবেদনে অভিবাসনের গতিশীলতা তুলে ধরা হয়েছে: ২০২২ সালে প্রায় ৫৯,৪০০ ইসরাইলি দেশ ছেড়েছেন; পরের বছর ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে সর্বোচ্চ ৮২,৮০০ জনে পৌঁছায়। ২০২৪ সালের প্রথম আট মাসেই প্রায় ৫০,০০০ জন দেশত্যাগ করেছেন। এই সংখ্যা ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসনের বার্ষিক গড় (৪০,৫০০ জন) থেকে বহুলাংশে বেশি।
বিশ্লেষকদের ধারণা, ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধ এই স্থায়ী দেশত্যাগের সংখ্যাবৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় জনমনে সৃষ্টি হওয়া চরম নিরাপত্তাহীনতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলেই ২০২৫ সালেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গণহত্যামূলক আগ্রাসনে প্রায় ৭০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। সম্প্রতি দুই বছরের মাথায় একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে এই আগ্রাসনের অবসান ঘটেছিল। তবে মেহের নিউজের সূত্র অনুযায়ী, দখলদার ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অমান্য করে বেসামরিক জনগণের ওপর গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ায় সেখানে শান্তির সম্ভাবনা পুনরায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং বহিরাগত আগ্রাসনের কারণেই ইসরাইলি জনগণ তাদের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান হয়ে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
